তুষার আহাম্মেদ, মুন্সীগঞ্জঃ- পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা:) সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপলক্ষে দা’ওয়াতে ইসলামী বাংলাদেশ মুন্সীগঞ্জ জেলার উদ্যোগে বিশাল জশনে জুলুস বের করেছে। সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) জেলা শহরের পশ্চিম দেওভোগ আলা হযরত রোড, মাদরাসাতুল মদিনা ও জামিয়াতুল মদিনা থেকে বের হয় জশনে জুলুস।
জুলুসটি জেলার পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসক কার্যালয় হয়ে টেনিস ক্লাব এর সামনে দিয়ে কাঁচা বাজার, সুপার মার্কেট আল্লাহু চত্বর, প্রেসক্লাব, পৌর ভবনের সামনে দিয়ে শহিদ মিনার এর সামনে এসে সালাতু সালাম মিলাদ কিয়াম ও দোয়ার মাধ্যমে সমাপ্ত হয়।
এরআগে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে দা’ওয়াত ইসলামী মুন্সীগঞ্জ জেলার সভাপতি মনোয়ার মাদানী আত্তারী এর সভাপতিত্বে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন, দাওয়াত ইসলামী বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় পরিষদের সদস্য ও যোগাযোগ বিভাগ জিম্মাদার মুফতি মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম মুজাদ্দেদী আত্তারি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুন্সীগঞ্জ জেলা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সভাপতি আলহাজ্ব মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম মুজাদ্দেদী, সরদার পাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব হাফেজ মুফতি হুসাইন আহমদ কাদেরী , মাওলানা হোসাইন আহমদ আতিকি, মাওলানা ফয়সাল মাদানী আত্তারি, মাওলানা নাসির মাদানী, মাওলানা শহিদুল ইসলাম, মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম সহ বিভিন্ন ধর্মীয় সামাজিক রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
আলোচনায় বক্তারা বলেন, “ঈদে মিলাদুন্নবী” সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগমনের খুশী উৎযাপন করাকে বুঝায়।
এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন “আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত প্রাপ্তিতে খুশি পালন কর যা তোমাদের সমস্ত ধন দৌলত অপেক্ষা শ্রেয়। – (সূরা ইউনুস-৫৮) এবং “স্মরণ কর আল্লাহর নিয়ামতকে যা তোমাদের উপর অবতীর্ণ হয়েছে” -(সূরা বাক্বারা-২৩১) আরেক আয়াতে বলা হয়।
“হে হাবীব, নিশ্চয়ই আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি” – (সূরা আম্বিয়া-১০৯)
এই তিনটি আয়াত একত্রিত করে বিবেচনা করলে দেখা যাবে আল্লাহর প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ রহমত। তাই তিনি যেদিন দুনিয়াতে তাশরীফ এনেছেন, সেদিনকে স্মরণ করে আমাদের খুশি পালন করা উচিত। আর এই কাজটিকেই বলা হয় ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অর্থাৎ নবীজীর আগমনে খুশী উৎযাপন করা। খুশী মানেই নবীর শানে দরুদ পড়া, আল্লাহর জিকির করা, নবীজির জীবনী নিয়ে আলোচনা করা ইত্যাদি।
আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই নিজের মিলাদের দিনকে পালন করতেন! তা কিভাবে? হযরত আবু কাতাদা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্নিত নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, এই দিনেই আমি প্রেরিত হয়েছি (জম্ম গ্রহণ করেছি) এবং এই দিনেই আমার উপর পবিত্র কুরআন নাযিল হয়। (সহীহ মুসলিম শরীফ)
সাহাবায়ে কেরাম আলাইহিমুর রিদওয়ান মিলাদুন্নবীর আলোচনা করতেন। হযরত ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, একদিন তিনি কিছু লোক নিয়ে নিজ গৃহে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্মকালীন ঘটনাবলী বর্ণনা করছিলেন এবং তাঁর প্রশংসাবলী আলোচনা করে দুরুদ ও সালাম পেশ করছিলেন। ইত্যবসরে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজির হয়ে এ অবস্থা দেখে বললেন, তোমাদের জন্য আমার শাফায়াত আবশ্যক হয়ে গেল। – (ইবনে দাহইয়ার আত-তানবীর)
অতএব আসুন আমরা ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লামকে উত্তমভাবে উদযাপন করি এবং নবী সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লামের সুন্নতকে আঁকড়ে ধরি দাওয়াতে ইসলামী বিশ্বের প্রান্তে নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর সর্বোত্তম আদর্শ তথা সুন্নতে কারিমাকে প্রতিষ্ঠার জন্য নেকির দাওয়াত প্রচার করছে আসুন আমরা সকলেই দাওয়াত ইসলামীকে সহযোগিতা করি।
এছাড়াও এদিন ঈদে মিলাদুন্নবী (সা:) এর উপলক্ষে বিভিন্ন ইসলামি সংগঠন, সাধারণ জনতা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা জশনে জুলুস, দোয়া মাহফিল ও তোবারক বিতরণ করে থাকেন।